ATEXSA

স্মৃতিচারণ

“ক্ষমা করো ফৌজিয়া আপা”

  • মোঃ কামরুল ইসলাম (লিটন), ব্যাচ : ১৯৮৮, আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়।

সালটা ছিল ১৯৮৬। তখন সবেমাত্র ৮ম শ্রেনী থেকে কৃতিত্বের সাথে ৯ম শ্রেনীতে উঠেছি। যথারীতি জানুয়ারী মাস শেষে পুরোদমে বিদ্যালয়ের পুনাঙ্গ ক্লাশ চলছিল। ছোটকাল থেকেই বড় হয়ে একজন নামকরা ডাক্তার হবো মনে একটু বাসনা ছিল, তাই ৯ম শ্রেনীতে উঠে বিজ্ঞান শাখায় নাম লিখলাম। বিজ্ঞান শাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো জীববিজ্ঞান। ফৌজিয়া আপা ৯ম শ্রেনীর জীব বিজ্ঞান বিষয়টি পড়াতেন। উনার স্বামী আশুগঞ্জ সাইলো-তে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তাই আশুগঞ্জ রেল ষ্টেশনের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত আশুগঞ্জ সাইলো থেকে প্রাত্যহিক ফৌজিয়া আপা স্কুলে এসে ক্লাশ করাতেন এবং ৯ম শ্রেনীর জীববিজ্ঞান বিষয়টি অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত আমাদেরকে পড়াতেন। ১ম সাময়িক পরীক্ষা শেষে দেখা গেল যে, জীব বিজ্ঞান বিষয়ে সবাই পাশ করেছে কিন্তু কেউ লেটার মার্ক পায়নি। আপা’র মন খারাপ, তাই ক্লাশে এসে ঘোষণা দিলেন আমার বিষয়ে যারা লেটার মার্ক পাবে, তাদের সবাইকে আশুগঞ্জ সাইলো ঘুরে দেখানো হবে এবং সেই সাথে আপা’র বাসায় দুপুরে আপ্যায়িত করা হবে। কথাটা আমার এবং আমার সহপাঠি আনম সারোয়ার (আনোয়ার) খুব মনে ধরেছিল। তখনকার সময়ে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশুগঞ্জ সাইলো এবং আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড কেমিক্যাল কোম্পানী ঘুরে-ঘুরে দেখা দুর-দূরান্তের তথা এখানকার মানুষের একটি শখ ও ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। পরিচিত মানুষ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত দেখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিল।

উল্লেখ্য, সহপাঠিদের মধ্যে আনোয়ার -এর সাথে আমার সর্ম্পক একটু নিবিড় ছিল। কারণ দু’জনেই মধ্যম সারির ছাত্র; রুল নাম্বার পাশাপাশি ছিল; সর্বোপরি দু’জনেই ক্লাশে একসাথে বসতাম। অবশেষে দু’জনে সিদ্ধান্ত নিলাম অন্য বিষয়ে পাশ-ফেল যাই করি না কেন, জীব বিজ্ঞান বিষয়ে লেটার মার্ক পেতেই হবে। কারণ ফৌজিয়া আপা’র বাসায় দাওয়াত খাওয়া, সেই সাথে স্বপ্নের জায়গা আশুগঞ্জ সাইলো ঘুরে দেখা কোনমতেই হাত ছাড়া করা যাবে না। অবশেষে বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল যে, জীব বিজ্ঞান বিষয়ে মোট ০৬ (ছয়) জন লেটার মার্ক পেয়েছে, তন্মধ্যে আমার এবং আনোয়ার -এর নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল। যথারীতি আপা’র ঘোষণা অনুযায়ী জানুয়ারী মাসের ১ম শুক্রবার আমরা ০৬ (ছয়) জন ফৌজিয়া আপার বাসায় দাওয়াত খেয়েছিলাম এবং সেই সাথে আশুগঞ্জ সাইলো ঘুরে-ঘুরে দেখেছিলাম। সত্যিই ঐদিন ছিল আমাদের জীবনের একটি অনন্য দিন। ঐদিনের কথা আজোও মাঝে-মধ্যে মনে পড়ে এবং সেই সাথে ফৌজিয়া আপা’র কথা। তবে যে কারণে আজকে আমার লেখার অবতারণা তা হলো, জীব বিজ্ঞান বিষয়ে একটি প্রশ্ন ছিল – প্রোটিন কাকে বলে ? উহা কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ লেখ? এই প্রশ্নটির উত্তর আমি এবং আনোয়ার দু’জনেই দু’বার (১ম প্রশ্নের উত্তর পর এবং শেষ প্রশ্নের উত্তর হিসাবে খাতায় লিখেছিলাম) ইচ্ছে করে দিয়েছিলাম এবং ফৌজিয়া আপা অজ্ঞাতসারে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরের বিপরীতে দু’বার নাম্বার দিয়েছিল এবং সেই কারণেই অন্যদের সাথে আমরা দু’জনও জীব বিজ্ঞান বিষয়ে লেটার মার্ক পেয়েছিলাম। মূলতঃ অন্যরা (টিপু, লিপন, রুনা, রোজি) লেটার মার্ক পেয়েছিল মেধার জোরে এবং আমরা পেয়েছিলাম মস্তিষ্কের আশ্রয়ের মাধ্যমে। সত্যিই সেদিনের অপকর্মের জন্য আজ আমি অনুতপ্ত। জানি না, আমার লেখাটা আপা’র হাতে পৌঁছবে কি-না ? ফৌজিয়া আপা এখন কোথায় এবং কেমন আছে তাও সকলেরই অজানা। দোয়া করি, আপা যেখানে থাকুক ভাল ও সুস্থ থাকুক। “নাড়ীর টানে, প্রাণের আহবানে” স্লোগান সামনে রেখে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় -এর প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আগামী ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ খ্রিঃ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য “গ্র্যান্ড রি-ইউনিয়ন” উপলক্ষ্যে অতীতের সেই জানা ভুলের জন্য আমি সত্যই আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। বিদায় বেলায় আসিফ আকবরের একটি গান খুব মনে পড়ছে –

“ক্ষমা করে দিও আমাকে

ভুলতে পারিনি সেই জানা ভুলটাকে

চলে গেছ অনেক দূরে

জানি তুমি আসবে না ফিরে”।